ফেনীতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রী-পুত্রকে বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার অভিযোগ
ফেনীতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রী-পুত্রকে বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা
ফেনীতে স্ত্রী-পুত্রকে বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।শুধু এখানেই শেষ নয়,দুই শ্যালিকা উম্মে রুমান ও উম্মে কুলসুম স্বামী নিয়ে সুখে সংসার করলেও পাচ্ছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা দিচ্ছেন জেলার ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ওই সদস্য কামরুজ্জামান ।
তাছাড়া তার শ্বশুর নুরেজ্জমান ও শাশুড়ি বিবি আয়েশাও পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা, বড় শ্যালক আনিসুজ্জামানের জন্যও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারের ভাতাসেবা নিয়ে ইউনিয়নটিতে এভাবেই নয়-ছয় চলছে ওই পরিষদে। স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা এ কামরুজ্জামান জনপ্রতিনিধি হয়ে এভাবেই বঞ্চিত করছেন গ্রামের অসহায় মানুষদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজে পরিষদের সদস্যের দায়িত্বে থেকেও তার স্ত্রী সালমা তাহিনুর পাচ্ছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা।ছেলে নাভিদুল হাসানের পিতৃপরিচয় গোপন করে গ্রহণ করছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।
এছাড়াও তার পরিবারের বাইরে যারা ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন তারা সকলেই কামরুজ্জামানের পছন্দের।অন্যথায় মিলছেনা ভাতা কার্ড।
স্থানীয় ইউনিয়ন আ'লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, ওয়ার্ডে এমন অনেকেই ভাতা পাবার যোগ্য হলেও তারা পাচ্ছেন না।অথচ এক বছরের টাকা দেওয়ার শর্তে কিছু লোককে অবৈধভাবে বয়স্ক ভাতা কার্ড দিয়েছে এ ইউপি সদস্য।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান জানান, ওয়ার্ডের সব প্রাপ্য ব্যক্তিকে ভাতা কার্ড দেওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের জন্য তা গ্রহণ করেছেন তিনি।
নিজের সন্তানকে প্রতিবন্ধী লিপিবদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০১৮ সালের পূর্বে সে রিকশা থেকে পড়ে হাত ভেঙে ছিল তাই প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছে। তবে ছেলের পিতৃপরিচয় গোপনের কারণ জিজ্ঞাস করলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।
শ্যালিকা উম্মে কুলসুম ও উম্মে রুমানের স্বামী যথাক্রমে মো. কাইয়ুম এবং জিয়া উদ্দিন চৌধুরীকে জীবিত থেকেও মৃত দেখানো প্রসঙ্গে তারা দুই বোন বলেন, ভাতা কীভাবে পাচ্ছেন তা তারা জানেন না। তারা ভাতার জন্য আবেদনও করেননি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন মিয়া জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে সতেরো জনের একটি যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে ভাতা কার্ডের জন্য নাম চূড়ান্ত হয়।ওই কমিটিতে ১২ জন ইউপি সদস্য ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধি, সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিনিধি এবং পরিষদের সচিব রয়েছেন।সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান থাকেন কমিটির সভাপতি হিসেবে।
যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন মিয়া বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর প্রতিটি আবেদন উন্মুক্ত পর্যালোচনা করি। আমার পূর্বে কীভাবে এগুলো হয়েছে তা আমার জানা নেই।প্রসঙ্গত, কার্ডগুলো ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ইস্যু করা হয়েছিলো।
যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার জানান,এমন বিষয় তার জানা নেই।
যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির কতটুকু দায়িত্ব পালন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজসেবা এ কাজটি করে থাকে।
কমিটির কাজ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, মেম্বাররা নিজ নিজ ওয়ার্ড থেকে সম্ভাব্য উপকারভোগীর তালিকা দিয়ে থাকেন। সব-সময় তা যাচাই করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না।
এছাড়া কামরুজ্জামান এক সময় ফুলগাজী উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকলেও বর্তমানে তিনি দরবারপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ।
তিনি আরও জানান,প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামের গাড়িবহরে হামলায় দায়েরকৃত মামলার আসামি কামরুজ্জামান ২০১৫ সালে দল পরিবর্তন করে আ'লীগে যোগ দেন।
দল পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে কামরুজ্জামান বলেন, রাজনীতির প্রয়োজনে দল পরিবর্তন করেছি।
সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট সাত হাজার ৭১৭ জন ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন চার হাজার ২৩ জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাচ্ছেন এক হাজার ৯৬০ জন এবং প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন এক হাজার ৭৩৪ জন।