ফেনীর যেই ইউনিয়নে মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই




২৬ জুলাই ২০২৩ ইং
s/j/b

ফেনী রিপোর্ট ডেস্ক:ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় ২৪টি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও সদর ইউনিয়নে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিহীন একটি ইউনিয়ন। 

মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ের অভাবে এখানকার শিক্ষার্থীরা নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।ফলে এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা তাদের কোমলমতি সন্তানদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য দূরদূরান্তে ভর্তি করাতে হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে। 

এছাড়াও এই ইউনিয়নে নেই নির্ধারিত কোন খেলার মাঠ, যার ফলে শিক্ষা ও খেলাধুলায় পশ্চাৎপদই রয়েগেছে এই ইউনিয়ন। প্রতিদিন বিদ্যালয় খোলার তারিখে সদর ইউনিয়নের মনগাজী বাজারে বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পরে  দল বেঁধে গাড়ীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় বিদ্যালয়টির অসংখ্য ছাত্র/ছাত্রীকে। 

এই ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে  সোনাগাজী পৌরসভার বিভিন্ন মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে একজন সুমাইয়া। সে চরখোয়াজ গ্রামের বাসিন্দা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হয়েছে সোনাগাজী পৌর শহরের বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। 

সুমাইয়া জানায়, প্রতিদিন তাকে প্রথমে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় মনগাজী বাজারে। সেখান থেকে বিদ্যালয়ে যেতে তার সিএনজি ভাড়া লাগে আরও 

 ১৫টাকা। 

স্থানীয়রা জনায়ট শুধু সুমাইয়া নয়, এমন শত শত শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য কয়েক কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়েনের শিক্ষার্থীদের। চরাঞ্চলের এই ইউনিয়নে নেই কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ফলে অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় এই ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ পোহাতে বেশি। 

প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে এই ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য মাইলকে মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে যেতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি, চরখোয়াজ, শাহাপুর, সুজাপুর, তুলাতুলি ও সুলাখালি গ্রামের কয়েক হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। 

যার ফলে অনেকে শিক্ষা বিমুখ হচ্ছে, মাঠ না থাকায় খেলাধুলা করতে না পেরে জড়িয়ে পড়ছে আড্ডায়। ফলে  উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় এই ইউনিয়নে শিক্ষার হার অনেক কম, যাতায়াত অসুবিধায় শিক্ষা ব্যয় বহুল হয় বলে অনেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে ঝরে পড়ে। 

সদর ইউপির আমির হোসেনের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শুভ বলেন, আমি সকাল ৭টায় স্কুলের যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হই। কারণ আমাকে বহুদূর যেতে হয় পায়ে হেঁটে। আমার সঙ্গে গ্রামের আরো অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যায়। বিদ্যালয় যেতে অনেক কষ্ট হয়। তবে বেশি কষ্ট হয় বর্ষাকালে। 

অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আশেপাশের কোনো মাধ্যমিক  বিদ্যালয় নেই। দূরবর্তী হওয়ায় আমরা বেশির ভাগ সময় স্কুলে সঠিক সময় পৌঁছাতে পারি না। এতে আমাদের পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে। 

সোনাগাজী সদর ইউপির বাসিন্দা মাওলানা সফি উল্যাহ নামের একজন অভিবাবক জানান, ইউনিয়নে কোনো  মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় পৌরসভা কিংবা আশপাশের অন্য ইউনিয়নের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। সন্তানের প্রতি সবসময় খেয়াল রাখতে পারছি না। 

দূরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়াসহ নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সন্তানদের নিয়ে দূশ্চিন্তায় থাকি। ছেলেমেয়েদেরকে পড়ালেখা করতে পাঠিয়ে তাদের আসা যাওয়ার দূরত্বের জন্য বিপদ-আপদ নিয়ে ভয়ে থাকি। 

আলমগীর হোসেন নামের এক প্রবাসী জানান, আমাদের গ্রামের শিক্ষার্থীদের যে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। সারা বছর কষ্ট। ইউনিয়নে এমপিও ভুক্ত কোন  মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার আলো থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছে। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়, উপজেলার একটি পৌরসভাসহ নয়টি ইউনিয়নে ২৪ টি এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার প্রতিটিতে আছে খেলার মাঠ যাতে করে এসব ইউনিয়ন পড়া লিখা ও খেলাধুলায় এগিয়ে। 

সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ফরিদ জানান, আমরা একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভুমি দাতা খুঁজছি। জায়গা দাতা পেলে দ্রুত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু করবো।

সোনাগাজী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন জানান, সদর  ইউনিয়নে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা দুঃখজনক, কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে সরকারি নীতিমালা মেনে প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে এগিয়ে আসলে আমরা সর্বাত্মাক সহযোগিতা করবো। 

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে কোন  মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই এটা অবিশ্বাস্য, আমরা এ নিয়ে উপর মহলে কথা বলে প্রয়োজনে খাস জমি বন্দন্দোবস্ত দিয়ে দ্রুত সময়ে বিদ্যালয় নির্মাণে উদ্যোগ নিবো। এছাড়া এলাকার ধনাঢ্য শিক্ষানুরাগী কেউ বিদ্যালয় নির্মাণে ভূমিদান করে এগিয়ে আসলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।