সোনাগাজীে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে আমনের বীজতলা তৈরী, রোপা যাবে ৫০ একর জমি




০৫ অগাস্ট ২০২৩ ইং
নিজস্ব সংবাদদাতা

সোনাগাজী সংবাদদাতা:

সোনাগাজীতে কৃষির উন্নয়নে (সমলয়) ট্রে পদ্ধতিতে উফশী ধানের চারা উৎপাদন করছে স্থানীয় ৬১জন কৃষক।উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী এলাকায় মাঠে সমলয় পদ্ধতিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় ৫০ একর জমিতে উফশি ব্রি-৮৭ জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে।

কৃষক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ ৫০ একর জমিতে আমন ধান চাষের জন্য ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, সার, বীজ, কীটনাশকসহ ফসল কার্টিং পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সকল খরচ বহন করবে কৃষি অফিস। একজন কৃষক শুধুমাত্র জমি দিয়ে সহযোগিতা করছে। 

কৃষকরা এবছর সমলয় চাষ পদ্ধতি শিখে আগামীতে নিজেরা এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করবে এবং অন্য কৃষকদের উৎসাহিত করবে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

গত রবিবার বিকেলে উপজেলার পূর্ব বড়ধলী এলাকায় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক একরাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের রোপন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াতুল হক বিটু, সোনাগাজী আঞ্চলিক ধান গবেষণার ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদীল, আসিফ বিশ্বাস, চর চান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার আল আমিন শেখ, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব।স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করে। এগুলো পরিচালনার জন্য জনবল লাগে কম। কিন্তু যান্ত্রিকীকরণের জন্য দরকার যৌথ খামার বা সমবায় কৃষিব্যবস্থা। 

একটি এলাকার কোনো একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়াকে যদি একই পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে জমির আল (সারি) বজায় রেখেও লাভ জনকভাবে যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব। ধান চাষে এ রকমের একটা কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন তারা ‘সমলয়’।

কৃষি বিভাগ বলছে, নতুন এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে ফসল কাটা, সবই একযোগে করা হবে। স্বল্প মানুষের সাহায্যে কাজ করবে যন্ত্র। জমির অপচয় রোধে এ পদ্ধতিতে প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে লাগানো হয় ধানের বীজ। ১৮-২০দিনের মধ্যে চারা হবে। 

তারপর রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হবে। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার এক ঘন্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে। এতে করে একজন কৃষেকের সাড়ে চার হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চর চান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী গ্রামে ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে আমন ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এই বীজ ৫০ একর জমিতে রোপণ করা যাবে। 

এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ১৫ থেকে ১৮দিনের চারা মাঠে রোপণ করা যাবে। প্রতিটি ট্রেতে ১২০ গ্রাম থেকে ১৩০ গ্রাম ধানের বীজ বপন করা যায়। 

ট্রের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহারে রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি বীজ বপনের ১৫ থেকে ১৮ দিন পর ধানের চারাগুলো মাদুরের মতো করে তোলা হয়। 

এরপর চারা রোপণ যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে একজন শ্রমিক একটি মেশিন দিয়ে দিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন। ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।

উপজেলার পূর্ব বড়ধলী এলাকার কৃষক ইব্রাহিম খলিল,একরামুল হক ও কামাল উদ্দিন, বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে ধানের চারা আগে কখনো চাষ করতে দেখিনি। 

প্রথমবারের মতো কৃষি অফিসের তত্তাবধানে ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে আমন ধান চাষাবাদ করেছি। আশা করি ফলনও ভালো হবে। এ বছর ফলন ভালো হলে তাঁদের দেখে অন্য কৃষকেরা ভবিষ্যতে আরও বেশি চাষাবাদ করবে।’

কৃষক রাশেদুল আলম বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে শ্রমিকের মজুরি কম লাগবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি আবিস্কার হওয়ায় শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিকের মজুরি ও ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। 

তাই ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং সমলয় পদ্ধতিতে ধানের চাষ বিস্তারের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ধান চাষ করা হবে। সহজেই কৃষকের ফসল উৎপাদন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

এছাড়া এ কার্যক্রমে সহজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা অধিক ফলন ঘরে তোলতে পারবে।এতে সময়ও সাশ্রয় হবে। সমলয় চাষাবাদের বীজতলা পরিদর্শন ও কৃষকদের কারিগরি দক্ষতা এবং জ্ঞানবৃদ্ধিতে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করে আসছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।